সুনামগঞ্জ , বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫ , ১৫ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
সাত বছরেও শেষ হয়নি ১৩০ কোটি টাকার দুই সেতুর নির্মাণকাজ নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে, হঠাৎ আক্রমণ চলে আসতে পারে : প্রধান উপদেষ্টা নিম্নমানের ইট দিয়ে নির্মাণকাজ,ভবনের দেয়াল ভেঙে দিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশ মিথ্যা তথ্যে ‘জুলাইযোদ্ধা’, ১২৮ জনের গেজেট বাতিল বালু লুটের প্রতিবাদে এনসিপি’র মানববন্ধন মোহনপুর-কাঠইর সড়ক বেহাল চলাচলে ভোগান্তির শেষ নেই জেলায় প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো ‘মেধা যাচাই বৃত্তি পরীক্ষা’ জেলা জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল সরকার-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে শান্তিগঞ্জে ফলোআপ কর্মশালা যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আনন্দ র‌্যালি সুরমার ঘাটে ঘাটে ময়লার ভাগাড় আজ ‘জেলা প্রশাসন মেধা যাচাই বৃত্তি পরীক্ষায় বসছে ৭৬ হাজার ৪৮৫ শিক্ষার্থী ধোপাজানে অবৈধভাবে ১৪ দিনে ২৪ কোটি টাকার সিলিকা বালু লুট জুলাই আন্দোলনের পর সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন আমলারা : হাসনাত আবদুল্লাহ সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন ধর্মপাশায় সড়ক পুনঃনির্মাণের দাবিতে অবরোধ যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত গণভোটে কী হবে? কলেজে টিকটক-লাইকির ভিডিও ধারণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি সুনামগঞ্জে শব্দদূষণ বিরোধী অভিযান: ৫ যানবাহনকে জরিমানা, জব্দ ৭ হাইড্রোলিক হর্ণ

সাত বছরেও শেষ হয়নি ১৩০ কোটি টাকার দুই সেতুর নির্মাণকাজ

  • আপলোড সময় : ৩০-১০-২০২৫ ০৯:১৫:০৪ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ৩০-১০-২০২৫ ০৯:২৬:৪৬ পূর্বাহ্ন
সাত বছরেও শেষ হয়নি ১৩০ কোটি টাকার দুই সেতুর নির্মাণকাজ
বিশ্বজিত রায়তাহিরপুর থেকে ফিরে::
সাত বছরেও শেষ হয়নি প্রায় ১৩০ কোটি টাকা বরাদ্দের শাহ আরেফিন-অদ্বৈত মৈত্রী সেতু ডাম্পের বাজার সেতুর নির্মাণ কাজ
এর মাঝে সময় বাড়ানো হয় কয়েক দফা। দুই সেতুর বিল বাবদ উত্তোলন হয়েছে ৮০ ভাগেরও বেশি টাকা। ঠিকাদার পক্ষ মাস ছয়েকের মধ্যে কাজ সম্পন্নের কথা বললেও এলজিইডি বলছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এমন দু’টানায় বহুল কাঙ্খিত সেতু দু’টি কবে চালু হবে তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
কৃষি, মৎস্য, পর্যটন ও খনিজ সম্পদসমৃদ্ধ সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী উপজেলা তাহিরপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিন্নাকুলি বাজারসংলগ্ন যাদুকাটা এবং ডাম্পের বাজারের পার্শ্ববর্তী পাটলাই নদীর উপর সেতু নির্মাণের উদ্যোগে নেওয়া হয়। এখানকার ধান, সবজি, মাছ, খনিজ পাথর ও বালু ছড়িয়ে পড়ছে দেশের সর্বত্র। এই সীমান্ত এলাকার তিন শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানী হচ্ছে মূল্যবান কয়লা ও চুনাপাথর। মোটকথা দেশের অর্থনীতিতে এ অঞ্চলের বৃহৎ অবদান রয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন শাহ আরেফিন-অদ্বৈত মৈত্রী সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর। জেলার দীর্ঘতম ৭৫০ মিটারের মৈত্রী সেতুর নির্মাণ ব্যয় ৮৫ কোটি ৯৯ লাখ ৩০ হাজার ৬৭৮ টাকা। এর মধ্যে ৬৭ কোটি ৬১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা বিল উত্তোলন করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। একই সময়ে পাটলাই নদীর উপর শুরু হওয়া ডাম্পের বাজার-বালিয়াঘাট নতুন বাজার সেতুর নির্মাণ কাজও শেষ হয়নি। ৪৫০ মিটার সেতুর নির্মাণ ব্যয় ৪৩ কোটি ৭৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫৭৯ টাকা। এর মধ্যে বিল দেওয়া হয়েছে ৩৫ কোটি ৫৬ লাখ ৮৩ হাজার ৮৯৯ টাকা। এর কাজও ২০২১ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। এই দুই সেতুর কাজ করছে ঢাকার একই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন।
সুনামগঞ্জ এলজিইডি জানিয়েছে, মৈত্রী সেতুর ৭৮ ভাগ কাজের বিপরীতে বিল দেওয়া হয়েছে ৭০ ভাগ। ডাম্পের বাজার সেতুর ৮৫ ভাগ কাজে বিল দেওয়া হয়েছে ৮০ ভাগ। এলজিইডি কাজের চেয়ে বিল কম দেওয়ার হিসাব দিলেও গড়পড়তা কাজের চেয়েও বিল বেশি নিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তারপরও সময়সীমার ৩০ মাস দূরের কথা সাত বছরেও শেষ হয়নি এ দুই সেতুর কাজ। নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হওয়ার বাড়তি সাড়ে চার বছরেও সেতুগুলো যাতায়াত উপযোগী না হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ আছে।
সম্প্রতি সরজমিনে গেলে ডাম্পের বাজার-বালিয়াঘাট নতুন বাজার সেতুর উপর দাঁড়িয়ে কথা হয় চারাগাঁও-বড়ছড়া শ্রমিক সর্দার কল্যাণ সমিতির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন ও স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. বজলুল আমিনের সাথে।
​তারা বলেন, ‘মূল সেতুর কাজ হলেও এপ্রোচ না হওয়ায় সেতুটি অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে। ঠিকাদারের লোকজনও নেই, কাজ করারও কেউ নেই।’ দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, ‘ডাম্পের বাজার সেতু হলে বাগলি, চারাগাঁও, বড়ছড়া শুল্ক স্টেশন ছাড়াও শনি ও মাটিয়ান হাওরের কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ীসহ সীমান্ত এলাকার লক্ষাধিক মানুষ পণ্য পরিবহন ও যাতায়াতে সুবিধা পাবে।’
তাহিরপুরের সীমান্ত এলাকা মেঘালয় খাসিয়া পাহাড়ের নিকটবর্তী টাঙ্গুয়ার হাওর, ট্যাকেরঘাট শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রি), শিমুল বাগান, বড়গোপ টিলা, বারেকটিলা, লাকমাছড়া, সীমান্ত হাট, রূপের নদী যাদুকাটা, অদ্বৈত জন্মধাম, শাহ আরেফিন (রহ.) আস্তানা কেন্দ্রীক পর্যটন, কৃষিপণ্য বিপণন এবং বাগলি, বড়ছড়া, চারাগাঁও তিন শুল্ক স্টেশনের যাতায়াত সুবিধার্থে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
সেতু দুইটি নির্মিত হলে জেলা সদর থেকে বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর সীমান্ত এলাকা হয়ে মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলার দশ লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত সহজ হবে। পাশাপাশি নেত্রকোণা হয়ে রাজধানী ঢাকার সাথেও যোগাযোগ স্থাপন হবে। এতে হাজারো পর্যটকের যাতায়াতসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে বলছেন স্থানীয়রা।
আরেফিন-অদ্বৈত মৈত্রী সেতুসংলগ্ন বিন্নাকুলি গ্রামের বাসিন্দা শাহীন আহমদ বলেন, মৈত্রী সেতু হয়েই সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণাসহ রাজধানী ঢাকার সাথে সীমান্ত এলাকার যোগাযোগ স্থাপন হবে। কিন্তু শুরুর সাত বছরেও শেষ হয়নি এ সেতুর কাজ। মাঝখানের বাকি পিলার উঠেছে, তবে গার্ডারের কাজসহ আনুষাঙ্গিক অনেক কাজ বাকি আছে। কবে শেষ হবে সেটা অনিশ্চিত।
সম্প্রতি সরজমিনে গিয়ে সেতুর কাজ চলমান আছে এমন বাস্তবতা চোখে পড়েনি। সেতুর উপর যত্রতত্র পড়ে আছে নির্মাণসামগ্রী।
খোঁজ নিতে বিন্নাকুলী বাজারের অস্থায়ী কার্যালয়ে গিয়ে কথা হয় মৈত্রী সেতুসংশ্লিষ্ট লোকজনের সাথে। তারা কাজ পেছানোর ক্ষেত্রে করোনা, বন্যা, নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। এছাড়া ডাম্পের বাজার মূল সেতুর কাজ শেষ হলেও বাকি আছে এপ্রোচের কাজ। পার্শ্ববর্তী কক্ষে গিয়ে সেতুসংশ্লিষ্ট লোকজনকে পাওয়া যায়নি।
ডাম্পের বাজার সেতুর সামান্য কাজ (শুধু এপ্রোচটুকু) বাকি আছে। আরেফিন-অদ্বৈত মৈত্রী সেতুর কাজ আগামী মাস ছয়েকের মধ্যে শেষ হবে বললেন তমা কনস্ট্রাকশনের প্রজেক্ট ম্যানেজার মিয়া মো. নাছির। মুঠোফোনে তিনি বলেন, বিগত বন্যায় মৈত্রী সেতুর একাধিক পিলার ভেঙে অনেক নির্মাণসামগ্রী তলিয়ে গেছে। আমাদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তারপরও আমরা কাজ দ্রুত করার চেষ্টা করছি। সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডির) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আরেফিন-অদ্বৈত মৈত্রী সেতুর কাজ দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় সম্প্রতি ঠিকাদারকে বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে ডাম্পের বাজার সেতুর কাজও শেষ হচ্ছে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অসমাপ্ত কাজের প্রাক্কলন তৈরি করে প্রকল্প অফিসে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক প্রাক্কলনটি ফেরত পাঠিয়েছেন। ফের তা সংশোধন করে পুনরায় পাঠানো হবে। অনুমোদন পেলে তখন টেন্ডার করে ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স